প্রচ্ছদসমসাময়িক

উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস মারা গেছেন

বাংলাদেশের প্রখ্যাত উর্দু ভাষার কবি আহমেদ ইলিয়াস (৯০) মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার ৭ জুলাই ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

কবি আহমেদ ইলিয়াস আল-ফালাহ বাংলাদেশ নামে ১৯৮১ সালে একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। আমৃত্যু তিনি সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলা-উর্দু সাহিত্য ফাউন্ডেশন নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ১৯৬০ সালে সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করেন।

উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস কলকাতায় ১৯৩৪ সালের ২৫ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের এক বছর পরই তাঁর বাবা সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আকৃষ্ট হয়ে ১৯৫৩ সালে কলকাতা থেকে পাকাপাকি ভাবে ঢাকায় স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য চলে আসেন। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পশ্চিমা শাসকরা রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করলে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন।

তিনি জিওলজিক্যাল সার্ভে অব পাকিস্তান নামে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করার পর তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণার সঙ্গে চাকুরী না মেলায় চাকুরী হতে অব্যাহতি নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে চাকুরী নেন। ১৯৬৪ সালে আহমেদ ইলিয়াস উর্দু ভাষার সংবাদমাধ্যম পাশবন এ যোগদান করেন। পরবর্তীতে উর্দু ভাষার প্রখ্যাত কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ এর লায়েল উন নাহার নামের পত্রিকার ঢাকা আঞ্চলিক প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭০ সালে তিনি পত্রিকাটির সম্পানা পর্ষদের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার তিনি বাংলাদেশেই থেকে যান।

১৯৭২ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব উর্দু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থের সংখ্যা ৬।‘বিহারিজ: দ্য ইন্ডিয়ান ইমিগ্রিজ ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘দ্য ওয়ার্ল্ড আই স’ হলো তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা। তাঁর কবিতার মূল উপজীব্য ছিলো বাংলাদেশে আটকে পড়া বিহারী, পাঞ্জাবী প্রভৃতি পশ্চিম পাকিস্তানীদের জীবনযাপনের দুর্দশার বাস্তব চিত্র। তিনি ভারতের কর্ণাটক থেকে উর্দু একাডেমীর সম্মাননা পেয়েছিলেন।

তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিক মহলে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কবি আহমেদ ইলিয়াসকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে।

পড়ুন- পরমপাঠ সাহিত্য পত্রিকা